রাকেশ শর্মার পর ভারতের মহাকাশ অভিযানে শুভাংশু শুক্লা: নাসার হাত ধরে মহাকাশে যাত্রা শুরু

৪০ বছর পর মহাকাশে যাচ্ছেন ভারতীয় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা। অ্যাক্সিয়ম-৪ মিশনে অংশগ্রহণ করবেন তিনি। জানুন, তার এই ঐতিহাসিক অভিযানের বিস্তারিত।

Shubhanshu Shukla preparing for space mission Ax-4

Last Updated on February 1, 2025 by কর্মসংস্থান ব্যুরো

ভারতীয় মহাকাশ ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা হতে চলেছে। প্রায় ৪০ বছর পর, ভারতের পক্ষে আবারও মহাকাশে পা রাখতে চলেছেন একজন সেনা কর্মকর্তা। ১৯৮৪ সালে উইং কমান্ডার রাকেশ শর্মার ঐতিহাসিক মহাকাশ অভিযান ছিল ভারতের মহাকাশ গবেষণায় একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। সেই অভিযানের পর, এবার ভারতীয় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা মহাকাশে পাড়ি দেবেন। এই অভিযানে তিনি অ্যাক্সিয়ম-৪ (Ax-4) মিশনের অংশ হিসেবে মহাকাশযাত্রা করবেন, যা একটি বেসরকারি মহাকাশ অভিযান হিসেবে পরিচালিত হবে এবং স্পেসএক্স ড্রাগন মহাকাশযানের সঙ্গে যুক্ত।

মহাকাশ অভিযানে ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা: নতুন যুগের সূচনা

ভারতীয় মহাকাশ গবেষণার জন্য এটি একটি বিশেষ মুহূর্ত। দীর্ঘ ৪০ বছর পর ভারতীয় নাগরিক হিসেবে মহাকাশে যাচ্ছেন একজন সেনা কর্মকর্তা, যার মাধ্যমে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণার অগ্রগতি স্পষ্ট হয়ে উঠছে। রাকেশ শর্মার মহাকাশ অভিযানের পর ভারতীয় মহাকাশচারীদের জন্য এটি আরেকটি ইতিহাসের সাফল্য। গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা অ্যাক্সিয়ম-৪ মিশনে পাইলট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন এবং এই অভিযানে তিনি প্রথম ভারতীয় বায়ুসেনা কর্মকর্তা হিসেবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (ISS) পা রাখবেন।

শুধু সময়ের ব্যবধান নয়, রাকেশ শর্মার সঙ্গে শুভাংশু শুক্লার আরও একটি মিল রয়েছে। ইসরো কর্তৃক নির্বাচিত গগনযান অভিযানের জন্য ভারতীয় মহাকাশচারী হিসেবে তাকে নির্বাচিত করা হয়েছে। এই অভিযানের মাধ্যমে ভারতের মহাকাশ গবেষণার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় যোগ হতে চলেছে। এই অভিযানে ইসরো, নাসা এবং অ্যাক্সিয়ম স্পেস যৌথভাবে কাজ করছে।

See also  ইলেকট্রিক স্কুটারের দুনিয়ায় বড় চমক! এক চার্জেই ৩২০ কিমি চলবে ওলার নতুন স্কুটার

Ax-4 মিশন: এক ঐতিহাসিক অভিযান

অ্যাক্সিয়ম-৪ মিশন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মিশন, যেখানে শুভাংশু শুক্লার সঙ্গে আরও তিন মহাকাশচারী অংশগ্রহণ করবেন। তাদের মধ্যে আছেন, মার্কিন মহাকাশচারী এবং মিশন কমান্ডার পেগি হুইটসন, পোল্যান্ডের স্লাওসুজ উজনানস্কি-উইসনিয়েভস্কি এবং হাঙ্গেরির টিবর কাপু। এই মিশনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো পোল্যান্ড এবং হাঙ্গেরির মহাকাশচারীরা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পা রাখবেন, যা তাদের দেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হয়ে থাকবে।

এই মিশনের জন্য অ্যাক্সিয়ম স্পেস একটি বিশেষ ‘স্পেস প্যাচ’ প্রকাশ করেছে, যা মহাকাশচারীদের স্পেস স্যুটে থাকবে। এই স্পেস প্যাচে চারটি উর্ধ্বমুখী রেখা রয়েছে, যা অংশগ্রহণকারী দেশগুলির পতাকার প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত হবে। তাছাড়া, তিনটি বিভাগ রয়েছে, যা তিন মহাদেশের যৌথ প্রচেষ্টাকে প্রকাশ করে। এই মিশনটি মহাকাশ গবেষণায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার এক দৃষ্টান্ত।

মহাকাশে ভারতের নতুন অভিযাত্রী: শুভাংশু শুক্লার অনুভূতি

অ্যাক্সিয়ম-৪ মিশন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে শুভাংশু শুক্লা বলেছেন, “মহাকাশে যাওয়ার জন্য আমি ভীষণ উত্তেজিত। মিশনের প্রতিটি ধাপ এগিয়ে চলেছে এবং মনে হচ্ছে সবকিছু একত্রিত হয়ে আসছে।” তার এই উচ্ছ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গি মহাকাশ অভিযানে অংশগ্রহণকারী অন্য মহাকাশচারীদের সঙ্গে তাকে আরও দৃঢ়ভাবে প্রস্তুত করছে।

এই মিশনটি ভারতীয় মহাকাশ গবেষণার জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করবে। যেখানে ভারতীয় মহাকাশচারী আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পা রাখবেন, সেই সঙ্গে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণায় আরও একটি মাইলফলক স্থাপিত হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই মিশন সফল হলে, এটি ভারতের মহাকাশ গবেষণায় একটি নতুন অধ্যায় হবে।

See also  ভারতের প্রথম মহাকাশচারী শুভাংশু শুক্লা (India’s first Astronaut) আইএসএসে পৌঁছানোর পথে: জানুন বিস্তারিত

অ্যাক্সিয়ম স্পেসের মহাকাশ অভিযানের প্রসার

অ্যাক্সিয়ম স্পেস ২০২২ সালে প্রথম Ax-1 মিশনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ১৭ দিন কাটিয়েছিল চার সদস্যের একটি দল। এরপর ২০২৩ সালের মে মাসে Ax-2 মিশন পরিচালিত হয়েছিল, যেখানে আট দিন কক্ষপথে থাকার পর মিশন সফলভাবে শেষ হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে Ax-3 মিশনে অংশগ্রহণকারীরা ISS-এ ১৮ দিন কাটিয়েছেন। এর মধ্যে, অ্যাক্সিয়ম স্পেস তাদের পরিসর দ্রুত বাড়িয়ে চলেছে, এবং মহাকাশ অভিযানের প্রতি আন্তর্জাতিক মহাকাশ সম্প্রদায়ের আগ্রহও বাড়ছে।

ভারতের মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন অধ্যায়

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি Ax-4 মিশন সফল হয়, তাহলে এটি ভারতের মহাকাশ গবেষণার জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হয়ে থাকবে। ভারতের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র (ISRO) ইতিমধ্যেই বিশ্ব মানচিত্রে নিজেদের একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে। গগনযান অভিযানের মাধ্যমে ভারত আরও একটি মাইলফলক অর্জন করতে চলেছে, যেখানে ভারতীয় মহাকাশচারীকে মহাকাশে পাঠানো হবে।

ভারতের জন্য এই অভিযানের সাফল্য শুধুমাত্র জাতীয় মর্যাদার বিষয় নয়, এটি বিশ্বমঞ্চে ভারতের বৈজ্ঞানিক শক্তির এক প্রতীক হিসেবে পরিগণিত হবে।

Join WhatsApp

Join Now

Join Telegram

Join Now