পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো বিশ্ববিদ্যালয় কোনটি?

পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়

Last Updated on January 9, 2025 by কর্মসংস্থান ব্যুরো

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে দুটি প্রতিষ্ঠান প্রধানত আলোচনা করা হয়, যা পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার দাবি রাখে। এগুলি হল মোরক্কোর আল কোরাউইইন বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইতালির বলগনা বিশ্ববিদ্যালয়। যদিও এদের প্রতিষ্ঠার সময় ভিন্ন, দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ই উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে এবং তাদের নিজ নিজ অঞ্চলে এক অনন্য ঐতিহ্য সৃষ্টি করেছে।

আল কোরাউইইন বিশ্ববিদ্যালয়

আল কোরাউইইন বিশ্ববিদ্যালয় ৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে মোরক্কোর ফেজ শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমদিকে এটি একটি মসজিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও, সময়ের সাথে সাথে এটি ইসলামী শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে বিশাল খ্যাতি অর্জন করে। বিশেষ করে ধর্মতত্ত্ব, গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, এবং ভাষাবিজ্ঞানে এটি অসামান্য অবদান রেখেছে। এটি ইউনেস্কো এবং গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস দ্বারা পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো, অবিচ্ছিন্নভাবে চলমান ডিগ্রি প্রদানকারী বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃত।

এছাড়াও, আল কোরাউইইন শুধুমাত্র তার বয়সের জন্য নয়, বরং এটি বিশ্বব্যাপী জ্ঞান সংরক্ষণ এবং প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এখানে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে স্কলাররা আসতেন এবং এর বৈচিত্র্যময় একাডেমিক পরিবেশে তাদের শিক্ষা লাভ করতেন। এর মধ্যে বিখ্যাত আলামি হলেন ইতিহাসবিদ এবং দার্শনিক ইবন খালদুন, যিনি সামাজিক বিজ্ঞানে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছেন।

বলগনা বিশ্ববিদ্যালয়

অন্যদিকে, বলগনা বিশ্ববিদ্যালয়, যা ১০৮৮ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়, পশ্চিম বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো চলমান বিশ্ববিদ্যালয়। এটি “স্টাডির মাদার” বা “পাঠ্যের মাতা” হিসেবে পরিচিত এবং এটি প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নিজেকে “ইউনিভার্সিটাস” হিসেবে ঘোষণা করেছিল, যা ছাত্রদের এবং অধ্যাপকদের একটি সংগঠিত সম্প্রদায়ের ধারণা ধারণ করে।

বলগনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল বিষয় ছিল আইন শিক্ষা, তবে সময়ের সাথে সাথে এটি নানা শাখায় শিক্ষা প্রদান শুরু করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্ব শুধু তার বয়সের কারণে নয়, বরং এটি একাডেমিক স্বাধীনতা এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাসনের ধারণা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষার্থীদের গিল্ড গঠনের সুযোগ প্রদান করেছিল, যা তাদেরকে প্রফেসরদের সঙ্গে টিউশন ফি এবং কোর্স অফারের ব্যাপারে আলোচনা করতে সক্ষম করেছিল। এই ভিত্তিতে, বর্তমান বিশ্বের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয়।

বর্তমানে, বলগনা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৮৭,৭৬০ জন ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়নরত, যার মধ্যে অনেক আন্তর্জাতিক ছাত্রও রয়েছেন। এর অ্যালামিদের মধ্যে তিনটি পোপ এবং রাজনীতি ও ব্যবসায়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি রয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়প্রতিষ্ঠার বছরঅবস্থানউল্লেখযোগ্য দিক
আল কোরাউইইন বিশ্ববিদ্যালয়৮৫৯ খ্রিস্টাব্দফেজ, মোরক্কোবিশ্বের সবচেয়ে পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী শিক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা
বলগনা বিশ্ববিদ্যালয়১০৮৮ খ্রিস্টাব্দবলগনা, ইতালিপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয় যেটি “ইউনিভার্সিটাস” ধারণাটি ব্যবহার করেছে, পশ্চিমী একাডেমিক স্বাধীনতা ও শাসনের ভিত্তি

পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়ের তকমা নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকে, তবে আল কোরাউইইন বিশ্ববিদ্যালয় এবং বলগনা বিশ্ববিদ্যালয় উভয়ই উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যেখানে আল কোরাউইইন ইসলামী সংস্কৃতির গুরুত্ব এবং শিক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে, সেখানে বলগনা বিশ্ববিদ্যালয় পশ্চিমী শিক্ষার ভিত্তি গড়ে তুলেছে এবং একাডেমিক স্বাধীনতার পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করেছে। এই দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ই আজও শিক্ষা ক্ষেত্রের অগ্রণী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সমাদৃত।

Join WhatsApp

Join Now

Join Telegram

Join Now