Last Updated on February 1, 2025 by কর্মসংস্থান ব্যুরো
এফসি গোয়ার কাছে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে হারার পর থেকে আইএসএলে নিজেদের শক্তি ফিরে পেয়েছে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (Mohun Bagan SG)। টানা ছ’টি ম্যাচে অপরাজিত থেকে নতুন বছর শুরু করেছে তারা, যা তাদের মজবুত অবস্থান এবং আত্মবিশ্বাসের চিত্রই তুলে ধরে। নতুন বছরে এখনও পর্যন্ত তাদের রেকর্ড অসাধারণ, পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে তিনটিতে জয় এবং দুটি ড্র। অন্যদিকে, মহমেডান স্পোর্টিং (Mohammedan Sporting) দলের অবস্থা একদম বিপরীত। তারা গত পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে জয় পেয়েছে এবং বাকি ম্যাচগুলিতে ড্র করেছে, কিন্তু জয়ী হতে পারেনি। এই অবস্থায় শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারি যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে অনুষ্ঠিত হতে চলা কলকাতা ডার্বি নিয়ে ফুটবলপ্রেমীরা অনেকটাই উত্তেজিত।
মোহনবাগানের সাম্প্রতিক ফর্ম অনেকটা শক্তিশালী হলেও তাদের সামনে এক বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। গত কয়েকটি ম্যাচে তারা অনেক সুযোগ তৈরি করেও গোল করতে ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষ করে, চেন্নাইন এফসি এবং জামশেদপুরের বিরুদ্ধে সুযোগ তৈরি করেও গোল করতে পারেনি তারা। গত ম্যাচে বেঙ্গালুরু এফসি-কে ১-০ ব্যবধানে হারালেও তাদের আক্রমণাত্মক খেলা বেশ কিছু প্রশ্নও তুলে দিয়েছে। সারা ম্যাচে মাত্র ৩৬.৬ শতাংশ পজেশন নিয়ে খেলে তারা জয় পায়, কিন্তু এটা পরিষ্কার যে, যদি গোলের সুযোগ হাতছাড়া হয়, তবে ভবিষ্যতে বড় দলগুলোর বিরুদ্ধে তাদের সমস্যা বাড়তে পারে।
মোহনবাগানের কোচ হোসে মোলিনা অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন যে, মহমেডানকে অবমূল্যায়ন করা উচিত নয়। মহমেডান তাদের শেষ কয়েকটি ম্যাচে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত লড়াই করেছে এবং তারা যে কোনো অঘটন ঘটাতে পারে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বিশেষ করে, বেঙ্গালুরু এফসি এবং চেন্নাইন এফসির বিরুদ্ধে তাদের কৃতিত্বপূর্ণ পারফরম্যান্স এই ম্যাচে কিছুটা আশা জাগাচ্ছে।
অন্যদিকে, মহমেডান এসসি বর্তমানে গোল করার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়েছে। তারা চলতি আইএসএলে পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে মাত্র তিনটি গোল করেছে এবং এখনও পর্যন্ত তাদের গোলসংখ্যা আটে আটকে রয়েছে। এই দুর্বল আক্রমণ তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে তাদের রক্ষণভাগ কিছুটা দৃঢ়তা দেখাচ্ছে, যেখানে তারা সারা ম্যাচে ক্লিন শিট রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু, তাদের রক্ষণগত দুর্বলতা তাদের জন্য বড় ঝুঁকি হয়ে উঠতে পারে, বিশেষ করে মোহনবাগান যেহেতু তাদের আক্রমণেও শক্তিশালী দল।
মহমেডান এসসি-র সহকারী কোচ মেহেরাজউদ্দিন ওয়াডু অবশ্য এ বিষয়ে বেশ আশাবাদী। তিনি জানাচ্ছেন, “এই ম্যাচ আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দলের খেলোয়াড়রা অনেক মনোযোগ দিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছে। আশা করছি, আমরা এই ম্যাচে ভালো ফলাফল পাব।” কিন্তু যদি মহমেডান তাদের রক্ষণভাগের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে না পারে, তবে মোহনবাগান তাদের জন্য আরও বড় সমস্যা তৈরি করবে।
কলকাতা ফুটবলের ঐতিহ্য বহনকারী দুটি দলের মধ্যে এই দ্বৈরথ অনেকটাই ইতিহাসের অংশ। ১৮৮৯ সালে মোহনবাগান এবং ১৮৯১ সালে মহমেডান স্পোর্টিং প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই কলকাতা ফুটবলে তাদের পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়েছিল। বিশেষত, ১৯৩৩ সালে প্রথম কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে মহমেডান মোহনবাগানকে পেছনে ফেলে ইতিহাস তৈরি করেছিল। আজও এই দুই দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা উত্তেজনা এবং আবেগের তুঙ্গে থাকে।
এ বছরের প্রথম ডার্বিতে মোহনবাগান ৩-০ ব্যবধানে জয়ী হয়েছিল, যদিও সে ম্যাচে দিমিত্রিয়স পেট্রাটস এবং জেসন কামিংস ছিলেন না। ওই ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচ ছিলেন গ্রেগ স্টুয়ার্ট এবং জেমি ম্যাকলারেন, যাদের দুর্দান্ত খেলা মোহনবাগানের আক্রমণকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছিল। সেই তুলনায় মহমেডানকে তারা একপেশে হারিয়েছিল। তবে, এই ম্যাচে মহমেডান নিজেদের ভুলগুলো কাটিয়ে উঠতে পারে এবং তাদের খেলার কৌশল বদলে দিয়ে মোহনবাগানকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে।
এই মুহূর্তে আইএসএলে মহমেডান এসসি কোনো হোম ম্যাচে জয়ী হয়নি এবং তাদের রক্ষণও বেশ দুর্বল। অন্যদিকে, মোহনবাগান এসজি কোণ থেকে কর্নার থেকে গোল করার ক্ষেত্রে সফল হলেও তাদের আক্রমণ আরও ধারালো করতে হবে। দিমিত্রিয়স পেট্রাটসের গোলের খরা এবং অন্যান্য আক্রমণাত্মক খেলোয়াড়দের কার্যকারিতা এই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।
এই গুরুত্বপূর্ণ কলকাতা ডার্বি অনুষ্ঠিত হবে ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, সন্ধ্যা ৭.৩০-এ বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচারিত হবে স্পোর্টস ১৮-৩ বাংলা, স্পোর্টস ১৮-১ (SD/HD), এবং জিও সিনেমা বাংলা, হিন্দি, ইংলিশ, এবং মালয়ালাম ভাষায়।
কলকাতা ডার্বি সবসময়ই উত্তেজনার শিখরে পৌঁছায় এবং এবারের ম্যাচেও সেই উত্তেজনা থাকবে। মোহনবাগান কি আবার তাদের শক্তি প্রদর্শন করবে, নাকি মহমেডান একটি বড় অঘটন ঘটাতে পারবে? 1 ফেব্রুয়ারি, ২০২৫-এ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে এটি সকলের জন্য দেখার মতো একটি ম্যাচ হতে চলেছে।