Last Updated on February 2, 2025 by কর্মসংস্থান ব্যুরো
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মেটা (Meta) তাদের ২০২৪ সালের চতুর্থ প্রান্তিক এবং পূর্ণ বছরের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে আয় ও মুনাফায় ব্যাপক প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। ফেসবুকের প্যারেন্ট কোম্পানি মেটা গত এক বছরে বিজ্ঞাপন থেকে আয় এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তির চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে ২০২৪ সালে তাদের মোট আয় ১৬ হাজার ৪৫০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। গত ডিসেম্বরে শেষ হওয়া চতুর্থ প্রান্তিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মেটার আয় আগের বছরের তুলনায় ২১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮৩৯ কোটি ডলারে।
মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গ বলেন, “২০২৫ সাল আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে, কারণ আমরা আরও উন্নত এবং বুদ্ধিমান AI অ্যাসিস্ট্যান্ট তৈরি করতে যাচ্ছি, যা বিশ্বব্যাপী ১০০ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছাবে।” তিনি আরও জানান, মেটা তার কাজের অন্যতম মূল ফোকাস হিসেবে AI চশমা এবং সোশ্যাল মিডিয়ার ভবিষ্যত নিয়ে কাজ করছে, এবং ভবিষ্যতে মেটাভার্সের প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন ডিজিটাল অভিজ্ঞতা তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে।
মেটার আয়ের পূর্বাভাস ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
মেটা আগামী ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে ৩ হাজার ৯৫০ থেকে ৪ হাজার কোটি ডলার আয় করতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। কোম্পানিটি আশা করছে, তাদের আয় প্রবৃদ্ধি আগামী বছরেও শক্তিশালী থাকবে। তবে, মেটার ব্যয়ের দিকেও উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি হবে, যেখানে ১২ হাজার কোটি ডলার পর্যন্ত ব্যয় হতে পারে। এই ব্যয়ের মূল কারণ হচ্ছে মেটার অবকাঠামো খরচ এবং কর্মচারীদের বেতন। গত বছর মেটার কর্মী সংখ্যা ১০ শতাংশ বেড়ে ৭৪ হাজার ৬৭ জনে পৌঁছেছে।
এআই এবং মেটাভার্সে মেটার বৃহৎ বিনিয়োগ
২০২৩ সালে মেটা তার নিজস্ব AI অ্যাসিস্ট্যান্ট ‘মেটা AI’ উন্মোচন করেছে, যা ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ওয়েব ব্যবহারকারীদের জন্য উপলব্ধ। এই অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রযুক্তি বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ৫০ কোটি ব্যবহারকারী নিয়ে শীর্ষ পাঁচ চ্যাটবটের তালিকায় প্রথম অবস্থানে রয়েছে। ২০২৪ সালে মেটা তাদের AI অবকাঠামোতে ৬ হাজার ৫০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করছে, যা তাদের ওপেনএআই এবং গুগলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সহায়তা করবে।
এছাড়া, মেটা মেটাভার্সের দিকে আরও বেশি মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে, যেখানে ব্যবহারকারীরা ভার্চুয়াল জগতের মাধ্যমে আরও বাস্তবসম্মতভাবে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে। মেটার মেটাভার্স পরিকল্পনা একে একটি নতুন যুগের প্রযুক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।
মেটার জন্য এআই এবং মেটাভার্সের ভবিষ্যত
মেটার জন্য আগামী ২০২৫ সালটি গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর হতে যাচ্ছে, কারণ তারা তাদের AI প্রযুক্তি এবং মেটাভার্সের খাতে বিশাল বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে। মার্ক জাকারবার্গ জানিয়েছেন, “এআই আমাদের পণ্য এবং ব্যবসার মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠবে, এবং এটি আমাদের প্রযুক্তির ভবিষ্যত।” মেটা বিশ্বাস করছে, তাদের AI এবং মেটাভার্স প্রযুক্তি আগামী বছরের মধ্যে ব্যাপকভাবে ব্যবসা এবং গ্রাহক অভিজ্ঞতায় বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম হবে।
মেটার ইতিহাস এবং বর্তমান প্রযুক্তি উন্নয়ন
২০০৪ সালে মার্ক জাকারবার্গ এবং তার কলেজ রুমমেটরা ফেসবুক প্রতিষ্ঠা করেন, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়। পরবর্তীতে ফেসবুক ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, অকুলাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম অধিকার করে এবং ২০২১ সালে ফেসবুকের নাম পরিবর্তন করে ‘মেটা’ রাখা হয়। এই পরিবর্তনের মূল উদ্দেশ্য ছিল মেটাভার্স প্রযুক্তির দিকে মনোযোগ দেওয়া, যাতে মানুষ ভার্চুয়াল পৃথিবীতে আরও বাস্তবসম্মত উপায়ে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে।
মেটার চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যতের প্রতিযোগিতা
মেটা বর্তমানে যে স্থিতিশীল অবস্থানে রয়েছে, তা প্রযুক্তি খাতের অন্যান্য কোম্পানির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। ডিজিটাল বিজ্ঞাপন বাজারের অনিশ্চিত পরিস্থিতিতেও মেটা তার আয় এবং মুনাফা পূর্বাভাসকে ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে, মেটা AI অবকাঠামো এবং মেটাভার্স প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের প্রতিযোগিতা শক্তিশালী করবে, যা আগামী বছরগুলোতে তাদের আরও লাভজনক করে তুলবে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, মেটার পরিকল্পনা এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নগুলি তাকে ওপেনএআই, গুগল এবং অন্যান্য বড় প্রযুক্তি কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রাখবে।
মেটার আর্থিক অবস্থা এবং ভবিষ্যত সম্ভাবনা
২০২৪ সালে মেটার আয়ের বিশাল বৃদ্ধি এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন পরিকল্পনা এটিকে প্রযুক্তি খাতে আরও শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাবে। AI এবং মেটাভার্স প্রযুক্তির ক্ষেত্রে মেটা যে বিশাল বিনিয়োগ করছে, তা নিশ্চিতভাবে তাদের ব্যবসার নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে সহায়তা করবে। তাই, মেটার ভবিষ্যত সাফল্য এবং আয় বৃদ্ধির বিষয়টি প্রযুক্তি খাতের জন্য একটি উজ্জ্বল দিক।
এটি স্পষ্ট যে মেটা তার প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে আগামী বছরগুলোতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।