মাধ্যমিক পরীক্ষা 2025: ১৪ দফার অঙ্গীকার, পরীক্ষার আগে স্কুলেই পাঠ করতে হবে

চলতি বছর থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য নতুন নিয়ম, ১৪ দফার শপথ নিতে হবে পরীক্ষা শুরুর আগে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এই উদ্যোগ।

Last Updated on February 1, 2025 by কর্মসংস্থান ব্যুরো

এ বছর থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য একটি নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে ১৪ দফার শপথ গ্রহণ করবেন। এই শপথের মাধ্যমে তারা তাদের পরীক্ষার সময় কীভাবে সঠিকভাবে আচরণ করবেন, সেই সম্পর্কিত সমস্ত দিক সম্পর্কে জানবেন। ১৪ দফার শপথের মূল উদ্দেশ্য হল পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিকতা এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করা, যাতে তারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সময় কোনো রকম অসাধু উপায় অবলম্বন না করে।

১৪ দফা গাইডলাইন: কী কী প্রতিশ্রুতি নিতে হবে?

মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের যে শপথ নিতে হবে, তাতে ১৪টি নির্দিষ্ট দফার গাইডলাইন রয়েছে। এই গাইডলাইনে পরীক্ষার্থীদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে অঙ্গীকার করতে হবে। তাদের মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য শপথ হল:

  1. মোবাইল ফোন বহন না করা: পরীক্ষার সময় মোবাইল ফোন বা কোনো ধরনের বৈদ্যুতিন যন্ত্র কেন্দ্রের মধ্যে নিয়ে যাওয়া যাবে না।
  2. অভিভাবককে না নেওয়া: পরীক্ষার দিন অভিভাবককে সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে প্রবেশ করা যাবে না।
  3. অন্যায় উপায় অবলম্বন না করা: ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য কোনো ধরনের নকল বা অসাধু উপায় অবলম্বন করা যাবে না।
  4. বৈদ্যুতিন যন্ত্র ব্যবহার না করা: পরীক্ষার কেন্দ্রে কোনো প্রকার বৈদ্যুতিন যন্ত্র যেমন ক্যালকুলেটর, স্মার্টওয়াচ ইত্যাদি নিয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ।

এই শপথের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারবেন, পরীক্ষা দেওয়ার সময় তাদের দায়িত্ব কী এবং তারা কীভাবে সঠিকভাবে পরীক্ষা প্রদান করবেন।

স্কুলে শপথ পাঠ: নতুন নিয়ম

এ বছর থেকে পরীক্ষার্থীদের শপথ পাঠ স্কুলেই করতে হবে, যা একটি নতুন উদ্যোগ। মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে পরীক্ষার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড বিতরণের সময় স্কুলেই তারা ১৪ দফার শপথ গ্রহণ করবেন। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, কারণ এতে ছাত্রদের মধ্যে পরীক্ষা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি হবে এবং তারা পরীক্ষার আগে সমস্ত নিয়মকানুন সম্পর্কে অবগত হবে।

মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সেক্রেটারি সুব্রত ঘোষ জানিয়েছেন, ‘‘আমরা সবসময় পরীক্ষার্থীদের সচেতন করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করি। তবে এবার শিক্ষার্থীদের সরাসরি শপথ পাঠ করানোর মাধ্যমে তাদের মধ্যে দায়িত্ববোধ আরও দৃঢ় করা হবে।’’

শিক্ষকদের ভূমিকা: ছাত্রদের সচেতন করতে শিক্ষকরা কীভাবে সাহায্য করবেন?

শপথ পাঠের সময় স্কুলের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের শপথ পাঠ করাবেন। শিক্ষকরা এই শপথের মাধ্যমে ছাত্রদের পরীক্ষার সঠিক পদ্ধতি এবং আচরণ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেবেন। এর ফলে শিক্ষার্থীরা জানবে, পরীক্ষার সময় কীভাবে তাদের মনোযোগী এবং সতর্ক থাকতে হবে।

এছাড়াও, শিক্ষকরা শপথের মাধ্যমে ছাত্রদের বুঝিয়ে দেবেন, পরীক্ষায় কোনো ধরনের অসাধু উপায় অবলম্বন করা না উচিত। এর ফলে ছাত্ররা পরীক্ষা দেয়ার সময় আরও দায়িত্বশীল এবং সতর্ক হয়ে উঠবে।

শপথের সময়: পরীক্ষার দিন না অ্যাডমিট কার্ড বিতরণের দিন?

শিক্ষকদের মধ্যে কিছু বিভ্রান্তি রয়েছে শপথের সময় নিয়ে। অনেক শিক্ষক মনে করেন, শপথ পাঠ পরীক্ষার দিন করানো হলে তা আরও কার্যকরী হতে পারে। কারণ, পরীক্ষার দিন শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে শপথ গ্রহণ করে তখনই তাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হবে এবং পরীক্ষার সময় তারা বেশি সতর্ক থাকবে।

তবে, শিক্ষামহলের মতে, অ্যাডমিট কার্ড বিতরণের সময় শপথ পাঠ করানোও ভালো সিদ্ধান্ত। এতে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা শুরুর আগে তাদের দায়িত্ব ও নিয়মকানুন সম্পর্কে জানবে এবং তারা প্রস্তুতভাবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে।

স্কুলের দায়িত্ব: শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি

স্কুলগুলির জন্য এই শপথ পাঠের ব্যবস্থা একটি বড় দায়িত্বের বিষয়। কারণ, এটি পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে একধরণের নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করবে। সঞ্জয় বড়ুয়া, নারায়ণ দাস বাঙুর মাল্টিপারপাস স্কুলের প্রধান শিক্ষক, বলেন, ‘‘আমরা স্কুলে প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে একসঙ্গে শপথ পাঠ করিয়েছি। যদি পরবর্তীতে কোনো শিক্ষার্থী অসাধু উপায় অবলম্বন করেন, তবে তার দায় শুধুমাত্র তার নিজস্ব, স্কুলের নয়।’’

এছাড়াও, স্কুলগুলো নিশ্চিত করবে যে, শপথ পাঠের পরে পরীক্ষার্থীরা কোনো রকম নিয়মভঙ্গ করবেন না। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হবে এবং পরীক্ষার পরিবেশ আরও সুষ্ঠু হবে।

মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য এই ১৪ দফার শপথ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি তাদের মধ্যে পরীক্ষার প্রতি দায়বদ্ধতা এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করবে। শিক্ষার্থীরা জানবে, কীভাবে পরীক্ষার সময় সতর্ক এবং দায়িত্বশীল হতে হবে। শপথ পাঠের মাধ্যমে তাদের মধ্যে নৈতিক শিক্ষা এবং সঠিক পরীক্ষার আচরণ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা তৈরি হবে। পরীক্ষার আগে এই ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা আরও আত্মবিশ্বাসী এবং সঠিকভাবে পরীক্ষা দিতে সক্ষম হবে।

Join WhatsApp

Join Now

Join Telegram

Join Now