Last Updated on February 1, 2025 by কর্মসংস্থান ব্যুরো
২০২৫ সালের কেন্দ্রীয় বাজেট অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন শনিবার সকালে ঘোষণা করেছেন। এবারের বাজেট বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন নিয়ে এসেছে, যা দেশের অর্থনীতি এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় বড় প্রভাব ফেলবে। বিশেষত, মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য এই বাজেটকে একটি বিশেষ সুবিধার বাজেট হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। আর্থিক দিক থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কর ছাড়, নতুন প্রকল্প এবং বিভিন্ন খাতে বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। আসুন, একনজরে দেখে নেওয়া যাক ২০২৫ সালের বাজেটের গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা।
২০২৫ সালের বাজেটে সবচেয়ে বড় ঘোষণা ছিল আয়করের ক্ষেত্রে করমুক্ত আয় সীমা বাড়ানো। বর্তমানে, ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয়ে কোনও আয়কর দিতে হবে না। অর্থাৎ, ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় থাকলে মধ্যবিত্তদের এখন কর দিতে হবে না, যা তাদের জন্য একটি বড় স্বস্তির বিষয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও শক্তিশালী হবে এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণি আরও উৎসাহিত হবে। এছাড়াও, নতুন আয়কর বিল প্রকাশ্যে আসবে আগামী সপ্তাহে, যাতে আয়কর পরিকাঠামো আরও সরল করা হবে।
প্রবীণ নাগরিকদের জন্য কর ছাড়
প্রবীণ নাগরিকদের জন্য কর ছাড়ের সীমাও বাড়ানো হয়েছে। আগের সীমা ছিল ৫০,০০০ টাকা, যা বর্তমানে ১ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এতে প্রবীণ নাগরিকদের ওপর আর্থিক চাপ কিছুটা কমবে এবং তারা আরও সুবিধা পাবেন। এটি প্রবীণদের জন্য একটি বড় ঘোষণা, যাদের আয় অনেক সময় সীমিত থাকে।
জীবনদায়ী ওষুধে শুল্ক ছাড়
স্বাস্থ্য খাতে এক বড় ঘোষণা এসেছে ২০২৫ বাজেটে। কেন্দ্রীয় সরকার ৩৬টি জীবনদায়ী ওষুধকে শুল্কমুক্ত ঘোষণা করেছে। এর ফলে, সাধারণ মানুষ এবং বিশেষত, যারা দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত, তারা এই ওষুধগুলির দাম কম হওয়া আশা করতে পারেন। স্বাস্থ্য পরিষেবায় এই সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা দেশের স্বাস্থ্য খাতকে আরও শক্তিশালী করবে।
কৃষি খাতের উন্নয়নে নতুন প্রকল্প
২০২৫ সালের বাজেটে কৃষি খাতে নতুন একটি প্রকল্প চালু করার ঘোষণা করা হয়েছে, যার নাম পিএম ধনধান্য কৃষি যোজনা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১০০টি জেলার কৃষকদের উন্নতি ঘটানো হবে। কৃষি খাতে উন্নতি সাধনের উদ্দেশ্যে এ ধরনের প্রকল্প খুবই প্রয়োজনীয়, কারণ কৃষি খাত দেশের অর্থনীতির মূল স্তম্ভ হিসেবে কাজ করে।
পর্যটন খাতে নতুন পদক্ষেপ
পর্যটন খাতের জন্যও এই বাজেটে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের সেরা ৫০টি পর্যটন কেন্দ্রকে উন্নত করা হবে রাজ্যগুলির সহায়তায়। এছাড়াও, বেসরকারি খাতের সঙ্গে অংশীদারিত্বে স্বাস্থ্যভিত্তিক পর্যটন (Medical Tourism) প্রচার করা হবে। এই পদক্ষেপটি দেশের পর্যটন খাতকে আন্তর্জাতিক স্তরে আরও জনপ্রিয় করে তুলবে।
শিক্ষা ও স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য বাজেটের ঘোষণা
শিক্ষা খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে ৫০,০০০ অটল টিঙ্করিং ল্যাব স্কুলগুলিতে স্থাপন করা হবে। এর মাধ্যমে শিক্ষার আধুনিকীকরণ এবং প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে। এছাড়াও, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) বিষয়ে ৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগের ঘোষণা করা হয়েছে, যা দেশের শিক্ষাক্ষেত্রকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।
স্কিল ডেভেলপমেন্টের উদ্দেশ্যে পাঁচটি ন্যাশনাল সেন্টার তৈরি করা হবে, যা দেশের যুবকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। এর মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়বে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে অবদান রাখবে।
বিভিন্ন খাতে বিশেষ ঘোষণা
- বীমা খাতে ১০০% বিদেশি বিনিয়োগ: বীমা খাতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো হবে, যা বীমা খাতকে আরও শক্তিশালী করবে।
- কিষাণ ক্রেডিট কার্ডে ঋণের সীমা বাড়ানো: কিষাণদের জন্য কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের ঋণ সীমা ৫ লক্ষ টাকা বাড়ানো হবে।
- ব্রডব্যান্ড পরিষেবা: গ্রামের সমস্ত সরকারি স্কুলে ব্রডব্যান্ড পরিষেবা চালু করা হবে।
উৎপাদন ও শক্তির খাতে বড় পদক্ষেপ
নতুন “ন্যাশনাল ম্যানুফ্যাকচারিং মিশন” চালু করা হবে, যা দেশের উৎপাদন খাতকে শক্তিশালী করবে। এছাড়াও, ছোট পারমাণবিক চুল্লি তৈরির জন্য ২০,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ২০৩৩ সালের মধ্যে ৫টি দেশীয় ছোট পারমাণবিক চুল্লি তৈরি করা হবে, যা দেশের শক্তির চাহিদা মেটাতে সাহায্য করবে।
নতুন পরিকল্পনা ও সহায়তা
- রফতানি সংক্রান্ত ঋণ অ্যাক্সেসের সুবিধা: রফতানি বৃদ্ধি করার জন্য ঋণ সহজে পাওয়া যাবে।
- বিকশিত ভারতে শূন্য দারিদ্রতা: ভবিষ্যতে ভারতের দারিদ্র্য মুক্তি এবং মানসম্পন্ন শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতির লক্ষ্য নিয়েছে সরকার।
বাজেটের পরিসংখ্যান ও সুরক্ষা
এই বাজেটটি দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথপ্রদর্শক হতে পারে, কারণ এটি নানা খাতের মধ্যে উন্নতি সাধন করবে এবং সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের জন্য নানা সুবিধা নিয়ে আসবে।