Last Updated on January 9, 2025 by কর্মসংস্থান ব্যুরো
ভারতীয় সংবিধান বিশ্বের দীর্ঘতম লিখিত সংবিধানগুলোর মধ্যে একটি, যা তৈরিতে ২ বছর, ১১ মাস এবং ১৮ দিন সময় লেগেছিল। ভারতীয় সংবিধান তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ১৯৪৬ সালের ৯ ডিসেম্বর, যখন সংবিধান প্রণয়ন সভা গঠন হয়, এবং এর চূড়ান্ত সংস্করণ গ্রহণ করা হয় ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর। তবে, ভারতের সংবিধানের জনক হিসেবে ড. বি. আর. আম্বেদকারের অবদান অনস্বীকার্য।
ড. বি. আর. আম্বেদকার ছিলেন সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সভাপতি, এবং তিনি এর খসড়া তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। একজন প্রশিক্ষিত আইনজ্ঞ এবং বিদ্বান হিসেবে, তিনি সংবিধান তৈরির সময় আধুনিক ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন, যা নতুন স্বাধীন দেশের জন্য প্রয়োজনীয় ছিল। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হওয়া উচিত এবং নাগরিকদের মৌলিক অধিকার এবং সমতা নিশ্চিত করা উচিত। এই মূল দিকগুলো তাঁর কাজের একটি অমর উত্তরাধিকার হিসেবে আজও রয়েছে।
ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ, যিনি সংবিধান প্রণয়ন সভার সভাপতি ছিলেন, তাঁর নেতৃত্বও এই প্রক্রিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি নানা পক্ষের মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য কূটনৈতিক দক্ষতা প্রদর্শন করেছিলেন।
ড. বি. আর. আম্বেদকারের গুরুত্বপূর্ণ অবদান:
ড. বি. আর. আম্বেদকার ভারতের সংবিধানের প্রধান আর্কিটেক্ট হিসেবে পরিচিত এবং তাঁর অবদান এই সংবিধানের মৌলিক কাঠামো গঠনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। তিনি বিশেষভাবে সামাজিক ন্যায়, সমতা এবং ব্যক্তির অধিকার রক্ষায় মনোযোগ দিয়েছিলেন।
১) খসড়া কমিটির নেতৃত্ব:
সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সভাপতি হিসেবে, ড. আম্বেদকার সংবিধান তৈরির প্রক্রিয়ায় নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন। তাঁর নেতৃত্বে, সংবিধানে ন্যায়, স্বাধীনতা, সমতা এবং ভ্রাতৃত্বের মত মৌলিক নীতিগুলি অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা সকল নাগরিকের জন্য সমান অধিকার এবং সুযোগ নিশ্চিত করেছিল।
২) মৌলিক অধিকার:
ড. আম্বেদকার বিশেষভাবে মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের পক্ষে ছিলেন, যা সংবিধানের তৃতীয় অংশে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তিনি এই অধিকারগুলোকে রাষ্ট্রের শোষণ এবং ব্যক্তিগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে রক্ষাকারী হিসেবে বিবেচনা করতেন। উল্লেখযোগ্য কিছু ধারা:
- ধারা ১৫: ধর্ম, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ বা জন্মস্থানের ভিত্তিতে বৈষম্য নিষিদ্ধ।
- ধারা ১৭: অভ্যন্তরীণ অব্যাহততা নিষিদ্ধ।
- ধারা ২৩: মেয়েদের শোষণ এবং জোরপূর্বক শ্রম নিষিদ্ধ।
৩) রাজ্য নীতির নির্দেশিকা:
ড. আম্বেদকার রাজ্য নীতির নির্দেশিকা সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন, যা সরকারকে সামাজিক কল্যাণ এবং অর্থনৈতিক ন্যায় নিশ্চিত করতে সহায়ক ছিল। যদিও এগুলি আইনি রূপে বাধ্যতামূলক নয়, কিন্তু এগুলো সরকারকে সুশাসন এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য পথ নির্দেশ করে।
৪) সামাজিক ন্যায় উদ্যোগ:
তিনি বিশেষভাবে অবহেলিত এবং পিছিয়ে পড়া জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করেছেন, বিশেষত Scheduled Castes এবং Scheduled Tribes-এর জন্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা, শিক্ষা এবং সরকারি চাকরিতে তাঁদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য।
৫) অভ্যন্তরীণ অব্যাহততা নিষিদ্ধকরণ:
ড. আম্বেদকারের সবচেয়ে বড় অবদান ছিল ধারা ১৭-এ অভ্যন্তরীণ অব্যাহততা নিষিদ্ধ করা, যা জাতিগত বৈষম্য এবং অব্যাহততার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সমতা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে।
৬) সংবিধানিক প্রতিকার:
তিনি ধারা ৩২-কে “সংবিধানের হৃদয়” হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন, যা নাগরিকদের তাদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হলে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করার অধিকার দেয়।
৭) লিঙ্গ সমতা:
ড. আম্বেদকার মহিলা অধিকার এবং লিঙ্গ সমতা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। তিনি হিন্দু কোড বিলের মতো প্রস্তাবনা উত্থাপন করেছিলেন, যা বিবাহ এবং উত্তরাধিকার আইন সংশোধন করে মহিলাদের অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করেছিল।
৮) কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক:
তিনি এমন একটি ফেডারেল কাঠামোর পক্ষে ছিলেন, যা কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্যগুলোর মধ্যে ক্ষমতার সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখবে।
ভারতীয় সংবিধানের কিছু আকর্ষণীয় তথ্য:
বিষয় | তথ্য |
---|---|
বিশ্বের দীর্ঘতম লিখিত সংবিধান | ৪৪৮টি ধারা, ১২টি তালিকা, ১০৪টি সংশোধনী (বর্তমানে) |
অপেক্ষার তারিখ | ২৬ নভেম্বর ১৯৪৯, কার্যকর ২৬ জানুয়ারি ১৯৫০ |
অনুপ্রেরণা | মার্কিন, ব্রিটিশ, আয়ারল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া |
মৌলিক অধিকার এবং কর্তব্য | সমতা, বাকস্বাধীনতা, ধর্মের স্বাধীনতা |
সংবিধানের নমনীয়তা | রigid এবং flexible, সংশোধন সম্ভব |
বিশেষ প্রদেশ | কাশ্মীর, নাগাল্যান্ড, মণিপুরের জন্য বিশেষ অধিকার |
ড. বি. আর. আম্বেদকার ভারতের সংবিধান প্রণয়নে অসামান্য ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে প্রণীত এই সংবিধান একটি শক্তিশালী কাঠামো গড়ে তুলেছে, যা স্বাধীন ভারতের সকল নাগরিকের অধিকার রক্ষা এবং সমাজের প্রতি ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।