Last Updated on February 1, 2025 by কর্মসংস্থান ব্যুরো
২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের পূর্ণাঙ্গ বাজেটে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন শিক্ষাক্ষেত্রে বড় কিছু ঘোষণা করেছেন। এই বছরের বাজেটে বিশেষভাবে মেডিকেল, আইআইটি এবং ডিজিটাল শিক্ষার ক্ষেত্রে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা দেশের শিক্ষার মান উন্নয়নে সহায়ক হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে প্রায় প্রতিটি স্তরে উন্নয়ন পরিকল্পনা করা হয়েছে। চলুন, জানি এবারের বাজেটে শিক্ষাক্ষেত্রে কী কী বড় ঘোষণা করা হয়েছে।
১. সরকারি স্কুলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা
শিক্ষাক্ষেত্রে বড় পদক্ষেপ হিসেবে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন যে, আগামী বছরের মধ্যে দেশের সমস্ত সরকারি মাধ্যমিক স্কুলগুলিতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করা হবে। এই পদক্ষেপটির মাধ্যমে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি পাবে, যা তাদের পাঠদানে সহায়ক হবে। পাশাপাশি, ভারতের প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্রগুলিকেও ভারতনেট প্রকল্পের অধীনে আনা হবে। এর ফলে স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহার আরো সুগম হবে এবং গ্রামীণ জনগণের জন্য চিকিৎসা সেবা সহজতর হবে।
২. মেডিকেল কলেজে বাড়বে আসন
মেডিকেল শিক্ষায় বড় পরিবর্তন আনতে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে যে, আগামী ৫ বছরের মধ্যে দেশের মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলিতে শিক্ষার্থীদের জন্য ৭৫,০০০ আসন বাড়ানো হবে। এর ফলে মেডিকেল শিক্ষার প্রতি আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য আরও বেশি সুযোগ তৈরি হবে এবং দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবায় দক্ষ চিকিৎসক তৈরি হবে। এছাড়া, আগামী ১০ বছরের মধ্যে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলিতে ১.১ লক্ষ ইউজি এবং পিজি আসন বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই পদক্ষেপটি দেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য আরও বেশি সুযোগ সৃষ্টি করবে।
৩. আইআইটিতে আসন বৃদ্ধি
শুধুমাত্র মেডিকেল ক্ষেত্রেই নয়, দেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইআইটি-গুলিতেও আসন সংখ্যা বাড়ানো হবে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানিয়েছেন যে, বিগত ১০ বছরে দেশের ২৩টি আইআইটিতে আসন সংখ্যা ৬৫,০০০ থেকে বাড়িয়ে ১.৩৫ লক্ষ করা হয়েছে। তবে, আরও অনেক শিক্ষার্থীকে আইআইটি-তে ভর্তি করা যাবে এবং সেই সঙ্গে শীর্ষস্থানীয় শিক্ষার্থীদের আরও উন্নত সুযোগ দেওয়া হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সাল থেকে ৫টি আইআইটি প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত ৬,৫০০ শিক্ষার্থীকে পড়ানোর জন্য যথাযথ পরিকাঠামো তৈরি করেছে এবং ভবিষ্যতে এই কাজ আরও জোরালো করা হবে।
৪. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) জন্য ৩টি সেন্টার ফর এক্সিলেন্স
২০২৩ সালে বাজেটে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) জন্য তিনটি সেন্টার ফর এক্সিলেন্স নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে কৃষি, স্বাস্থ্য এবং শহরাঞ্চলের উন্নয়নে প্রযুক্তি ব্যবহার ছিল। এবার নতুন করে ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে শিক্ষা ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) প্রশিক্ষণের জন্য আলাদা একটি সেন্টার তৈরি করা হবে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ডেটা সায়েন্সের উপর গভীর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, যা তাদের ভবিষ্যতের ক্যারিয়ার গড়তে সহায়ক হবে।
৫. আয়কর ছাড় এবং অন্যান্য কর সুবিধা
বাজেটে শিক্ষাক্ষেত্রে যে পদক্ষেপগুলি নেওয়া হয়েছে, তা ছাড়াও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন কর ছাড়ের ক্ষেত্রেও বড় ঘোষণা করেছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন যে, ১২ লক্ষ টাকার পর্যন্ত আয়কর শূন্য ঘোষণা করা হবে, যা দেশের সাধারণ নাগরিকদের জন্য অত্যন্ত উপকারি। এটি বিশেষভাবে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের জন্য সাহায্যকর হবে, যারা ভবিষ্যতের জন্য অর্থ সঞ্চয় করতে চান। এই সিদ্ধান্তটি তাদের জন্য উৎসাহজনক, যারা উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
২০২৫ সালের বাজেটটি শিক্ষাক্ষেত্রে একটি বড় পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। দেশের সরকারি স্কুলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা চালু, মেডিকেল কলেজে আসন সংখ্যা বৃদ্ধি, আইআইটি-তে সুযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) জন্য আলাদা সেন্টার ফর এক্সিলেন্স তৈরির ঘোষণাটি শিক্ষাক্ষেত্রে একটি নতুন যুগের সূচনা করবে। এসব পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের জন্য আরও ভালো সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং দেশের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নত করবে।